একটি ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের সমস্যা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে সুইডেনের নিরাপত্তা বিশারদ আর্লিং বিওল (Earling BIOL) বলেছেন : ‘ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের সমস্যা অনেকটা পাইলট মাছের সমস্যার মতো, হাঙরের কাছাকাছি থেকেও কীভাবে তার মুখে না পড়ার কৌশল।’ [‘The Rim state’s problem is like the problem of a pilot fish, how to keep close to the shark without being eaten up.’] । ভারতের মতো বিরাট শক্তিধরের কাছাকাছি থেকে পাইলট মাছের মতো ক্ষুদ্রাকৃতি অথচ নিরীহ বাংলাদেশ কীভাবে নিজের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে বাংলাদেশের নিরাপত্তা সমস্যার প্রকৃতি এইটিই। বাংলাদেশী প্রতীকে বলা যায়, বিপুলায়তন ভারতীয় বোয়াল মাছের কাছাকাছি ক্ষুদ্র পাবদা মাছের নিরাপত্তার কৌশল। খুব কাছেও যাওয়া যাবে না, কেননা তখন ক্ষুধার্ত বোয়ালের পেটে পড়তে হবে। অন্যদিকে খুব দূরেও থাকা সম্ভব নয়, কেননা বোয়ালটি কখন কী করে, কোন দিকে বাঁক ফেরে তাও জানা দরকার। এ দুইয়ের সাম্যাবস্থাই বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা নীতি। জিয়াউর রহমানের কৃতিত্ব এই যে, তিনি দুইয়ের মধ্যে সাম্যাবস্থা সৃষ্টির কৌশলটি পুরোপুরি আয়ত্ত করতে পেরেছিলেন।
একজন নিরাপত্তা বিশারদ হিসেবে জেনারেল জিয়া অনুধাবন করেন যে, এক. ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক স্থাপন করতে হবে, কিন্তু এই সুসম্পর্ক হতে হবে সম-সার্বভৌমত্বের ভিত্তিতে, আধিপত্য ও অধীনতার (dominance and dependence) কাঠামোয় নয়। দুই. ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ককে স্থিতিশীল করার জন্য প্রয়োজন হবে আঞ্চলিক রাষ্ট্রগুলোকে সহযোগিতার স্বর্ণসূত্রে আবদ্ধ করা এবং এই সহযোগিতার ক্ষেত্র শুধু রাজনৈতিক নয়, সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিকসহ তথ্যপ্রবাহ ও অন্যান্য ক্ষেত্রও। তিন. বাংলাদেশের মতো ক্ষুদ্র পাবদা মাছটিকে শুধু শক্তিশালী হলেই চলবে না, তাকে ক্ষিপ্রগতিসম্পন্নও হতে হবে। চার. সঙ্গে সঙ্গে এও তিনি অনুধাবন করেন যে, সঙ্কটকালে সাহায্য-সহযোগিতার হস্ত প্রসারিত করতে পারে এমন অকৃত্রিম, আদর্শিক দিক থেকে সমমনা এবং সমস্বার্থের কিছু বান্ধব সৃষ্টি করাও অপরিহার্য। অন্য কথায়, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বহুমুখীকরণও ছিল এর অন্যতম উপাদান। জিয়াউর রহমানের পররাষ্ট্রনীতি এই চারটি সূত্রের বন্ধনীতেই আবদ্ধ ছিল।
তিনি একজন সফল রাজনীতিক হিসেবে এই সত্যও অনুধাবন করেন যে, বাংলাদেশের জনগণই বাংলাদেশের নিরাপত্তার সর্বপ্রথম ও সর্বপ্রধান ঘাঁটি। জাতীয় ঐক্য হলো জাতীয় নিরাপত্তার দুর্ভেদ্য দুর্গ। এই দুর্গ সুরক্ষিত থাকলে বৈরী শক্তি যতই প্রবল হোক না কেন, জাতীয় নিরাপত্তা সুরক্ষিত থাকবে। তাই তিনি জাতীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণের যে মৌল স্তম্ভ অভ্যন্তরীণ পরিবেশ, সেদিকে প্রথমে মনোনিবেশ করেন। একজন শ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধারূপে এবং জেড ফোর্সের সংগঠক হিসেবে তিনি প্রতিনিয়ত লক্ষ্য করেছেন, একটি ঐক্যবদ্ধ জাতি কীভাবে অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলে। যুদ্ধকালে কিছু বিপথগামী পাকিস্তানপন্থী কিছু সমস্যা সৃষ্টি করেছিল বটে; কিন্তু সুদৃঢ় জাতীয় ঐক্যের মুখে সব প্রতিবন্ধকতা কর্পূরের মতো উবে গিয়েছিল। জাতীয় ঐক্য যে জাতীয় নিরাপত্তার প্রাণশক্তি, এই বিশ্বাস তাকে এই পদক্ষেপ গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে।
এই লক্ষ্যে তিনি বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন। এক. তিনি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কঠোর হস্তে নিয়ন্ত্রণ করে সর্বপ্রথম জনগণের আস্থা অর্জন করেন। দুই. দল-মত ও বিশ্বাস নির্বিশেষে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের মাধ্যমে জনগণের কাছে তার বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তিন. আদর্শিক সংঘাতে বিভক্ত ১৯৭২-’৭৫ সময়কালের সামাজিক শক্তিগুলোকে সংহত এবং ঐক্যবদ্ধ করেন। এ প্রসঙ্গে এটিও উল্লেখযোগ্য যে, তিনি তার শাসনকে দল-নিরপেক্ষ এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করার প্রয়াস গ্রহণ করেন। চার. যখন তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠন করেন, তখনও ‘উদার হস্ত’নীতির (Open arm) মাধ্যমে ডান থেকে, কেন্দ্র থেকে, এমনকি বামপন্থীদেরও নেতাকর্মীরূপে বাছাই করে একটি জাতীয় দলের আদলে নিজের দলকে সমগ্র জাতির কাছে উপস্থাপন করেন। পাঁচ. দেশে বিদ্যমান অর্ধশতাধিক উপজাতীয় জনগোষ্ঠী যেন বাংলাদেশের রাজনীতির মূল স্রোতে ফিরে এসে একাত্মতা অনুভব করতে পারেন সেই লক্ষ্যে শুধু ভাষাভিত্তিক সঙ্কীর্ণ বাঙালি জাতীয়তাবাদের পরিবর্তে ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও অঞ্চলভিত্তিক বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের নতুন সত্য সবার সামনে তুলে ধরেন। ফলে ১৯৭৬-’৮১ সময়কালে বাংলাদেশ সমাজে যে ঐক্যবোধ সৃষ্টি হয়, তা অভূতপূর্ব। এই জাতীয় সংহতি তার সাফল্যের অন্যতম চাবিকাঠি। এই ঐক্যবোধ সৃষ্টির জন্য তিনি তার লক্ষ্যে সফল হয়েছিলেন।
জাতীয় সংহতি সুদৃঢ় করার পরে তিনি দুই পর্যায়ে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নির্ধারণে অগ্রসর হন। আঞ্চলিক পর্যায়ে দক্ষিণ এশিয়ার সব ক’টি দেশ—ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা সফর করেন এবং পরবর্তী পর্যায়ে উষ্ণ কূটনীতির মাধ্যমে সব দেশের রাষ্ট্রনায়কদের মনে এই বিশ্বাস সৃষ্টি করতে সক্ষম হন যে, বাংলাদেশ শান্তির পক্ষে, অগ্রগতি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পক্ষে। রাষ্ট্রপতি হিসেবে জিয়ার বক্তব্যে তখন নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপের মতো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্র নিজেদের ভাবনা-চিন্তা, নিজেদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন দেখতে পেল। এমনকি ভারত ও পাকিস্তানের শাসকগণও দক্ষিণ এশীয় অগ্রগতির ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি জিয়ার বক্তব্যে দেখতে পান তাদেরই অভিপ্রায়, তাদেরই উচ্চাকাঙ্ক্ষা, তাদেরই দূরদৃষ্টি। ১৯৭৭ সালের ২৭ ডিসেম্বরে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ভারত সফরে গেলে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ভারতের রাষ্ট্রপতি নীলম সঞ্জীব রেড্ডি তার সম্মানে আয়োজিত ভোজসভায় বলেছিলেন, ‘একজন সাহসী মুক্তিযোদ্ধা এবং বাংলাদেশে স্বাধীনতার প্রথম ঘোষণাদানকারী হিসেবে আপনার মর্যাদা এরই মধ্যে সুপ্রতিষ্ঠিত। ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পরে জাতীয় অগ্রগতি এবং জনকল্যাণে নিবেদিত একজন জননেতা হিসেবে বাংলাদেশে ও বাংলাদেশের বাইরে আপনি গভীর শ্রদ্ধা অর্জন করেছেন। [‘Your position is already assured in the annals of the history of your country as a brave fighter who was the first to declare the independence of Bangladesh. Since you took over the reins of government in your country, you have earned wide respect both in Bangladesh and abroad as a leader dedicated to the progress of your country and the well-being of your people.’]
এভাবে হাজার বছরের জমাট বাঁধা অবিশ্বাস, সন্দেহ এবং আস্থাহীনতার ঘন অন্ধকারে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বপ্রথম বিশ্বাস ও আস্থার প্রদীপটি জ্বালিয়ে ছিলেন। সেই পথ ধরেই ১৯৮৫ সালের ৭/৮ ডিসেম্বর ঢাকায় রচিত হয় দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতার (SAARC) সৌধটি। এ ক্ষেত্রে এও উল্লেখযোগ্য যে, রাষ্ট্রপতি জিয়ার আমলে (প্রথম বছরটি ছাড়া) ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ। গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয় ঢাকায়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই-এর প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে।
আঞ্চলিক পর্যায়ে তিনি যে কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তা আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে তার সৃজনশীল প্রতিভার স্পর্শে। তিনি যখন ক্ষমতাসীন হন তখন আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ছিল নিঃসঙ্গ, একাকী, বন্ধুহীন। ইন্দো-সোভিয়েত কক্ষপথে আবর্তিত বাংলাদেশ ছিল অনেকটা শ্রীহীন, ভারতের বর্ধিতাংশের মতোই। অপচয়প্রবণ তথাকথিত সমাজতন্ত্রের নিগড়ে বন্দি বাংলাদেশ হয়ে পড়েছিল হেনরি কিসিঞ্জারের কথায়, ‘এক তলাবিহীন ঝুড়ি’। বাকশালের অপকৃষ্টির ফলে দেশ থেকে গণতন্ত্র হয় নির্বাসিত। রাষ্ট্রপতি জিয়া বাংলাদেশ থেকে সেই পীড়নমূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে এবং দেশের জনগণকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে বহুদলীয় গণতন্ত্রের ক্ষেত্র রচনা করেন, বিশেষ করে বেসরকারি পর্যায়ে দেশি-বিদেশী উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে উত্সাহ দিয়ে। বেসরকারি ব্যাংক-বীমা ব্যবস্থা প্রবর্তন করে এবং ইন্দো-সোভিয়েত কক্ষপথ থেকে বাংলাদেশের গতিপথ পরিবর্তন করে বিশ্বময় বিস্তৃত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করেন। তখনকার অন্যতম পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে হাজারও প্রকরণে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট হয়ে আবদ্ধ হয় বন্ধুত্বের দৃঢ় সূত্রে। আজকে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যে সম্পর্ক, তার ভিত্তি রচিত হয় তখন। ইউরোপ তখন থেকে আগ্রহী হয় বাংলাদেশ সম্পর্কে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং গতিশীল অর্থনীতির দূরপ্রাচ্য বন্ধুত্বের বার্তা নিয়ে বাংলাদেশের কাছাকাছি আসে তখন থেকেই। ছুটে আসে বিনিয়োগের ডালা সাজিয়ে। যে চীন এতদিন বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছিল, সেই চীনের সঙ্গেও গড়ে ওঠে বাংলাদেশের হৃদ্যতা। ওই সময় থেকেই ৫৭টি রাষ্ট্রের সমন্বয়ে গড়া ইসলামী সম্মেলন সংস্থা (ওআইসি) তথা মুসলিম বিশ্ব বাংলাদেশের অকৃত্রিম মিত্রে পরিণত হয় জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত পদক্ষেপের জন্য। মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং মর্যাদাসম্পন্ন আল-কুদস কমিটির সদস্য হয় বাংলাদেশ। সৌদি আরব হয়ে ওঠে বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। আরাফাত ময়দানে সারি সারি রোপিত নিম গাছ এখনও সৌদি আরব-বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সেতুবন্ধনের জীবন্ত সাক্ষ্য হয়ে রয়েছে। ইরাক-ইরান যুদ্ধাবস্থা নিরসনের দায়িত্ব আসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ওপর। অন্যদিকে জাতিসংঘে বাংলাদেশের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ১৯৭৮ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে নির্বাচিত হয়ে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষার পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের সুযোগ লাভ করে। এখন শান্তিরক্ষী বাহিনীর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের নির্ভীক সেনানীরা যে ভূমিকা পালন করে চলেছেন, তার সূচনা তখন থেকেই। এমনি পরিবেশে যে ভারত সব সময় বাংলাদেশকে ‘তাদের সৃষ্টি’ বলে দাবি করে উদাসীন থেকেছে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ ও জনস্বার্থ সম্পর্কে, জিয়ার সৃষ্টিশীল নেতৃত্বে সেই ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ‘আধিপত্য-অধীনতা’ (dominance-dependence) কাঠামো ছাড়িয়ে সহযোগিতার স্বর্ণসূত্রে গ্রথিত হতে থাকে। উভয়ের সম্পর্ক হয়ে ওঠে পারস্পরিক শ্রদ্ধার, সাম্যের এবং সম-সার্বভৌমত্বের। ভারত হয় বাংলাদেশের অন্যতম নির্ভরযোগ্য মিত্র।
মোটকথা, একজন দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়করূপে রাষ্ট্রপতি জিয়া জাতীয় পর্যায়ে যে সুষমনীতি নির্ধারণ করেন, তাই প্রতিফলিত হয়েছে আঞ্চলিক পর্যায়ে এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে। এসবের মূলে সার্বক্ষণিকভাবে কাজ করেছে জিয়ার এই বিশ্বাস যে, মুক্তিযুদ্ধের অনলকুণ্ড থেকে প্রাণ পাওয়া বাংলাদেশের রয়েছে এক ঐতিহাসিক গন্তব্য। রয়েছে তার স্বতন্ত্র ঠিকানা। বাংলাদেশ অন্যের এক ইঞ্চি ভূমির ওপর দখল কায়েম করতে চায় না। চায় না তার এক ইঞ্চি ভূমির ওপর অন্য কেউ দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করুক। বাংলাদেশের জনগণ কারও আধিপত্য যেমন মেনে নেবে না, তেমনি কারও ওপর আধিপত্য বিস্তার করে অন্যকে অধীন করতেও নারাজ। জনগণের এই ধ্যান-ধারণা ধারণ করেই জিয়াউর রহমান চেয়েছিলেন আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে এক স্বাধীন সত্তারূপে বিকশিত হওয়ার ক্ষেত্র তৈরি করতে। এক সময় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লর্ড পামারস্টোন বলেছিলেন : ব্রিটেনের নেই কোনো স্থায়ী বন্ধু, নেই কোনো স্থায়ী শত্রুও। যা স্থায়ী তা হলো ব্রিটেনের স্থায়ী স্বার্থ। রাষ্ট্রপতি জিয়ার তৈরি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের জটিল জাল পর্যালোচনা করুন, সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান স্মরণে রাখুন এবং বাংলাদেশের জনগণের চিন্তা-ভাবনা এবং রাজনৈতিক সচেতনতাকে পাশে রাখুন, দেখবেন, প্রায় আড়াই দশক আগের বাংলাদেশে যা ঘটেছিল, তা এক কথায় ঐতিহাসিক। কোনো প্রাজ্ঞ নিরাপত্তা বিশারদ অথবা কোনো সৃজনশীল পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞ আজও এর কোনো বিকল্প উদ্ভাবনে অক্ষম। এই ক্ষেত্রেই জিয়ার সাফল্য।