কেবল মুখে মুখে ‘বড় নেতা‘ দাবি করা সহজ, যদি অনুগত স্তাবকরা থাকে। তবে যারা সত্যিকারের কাজের মানুষ, তারা কাজ করে দেখায়। আমাদের রসুলুল্লাহ (সঃ) শিশুটিকে মিষ্টি খেতে বারণ করার আগে নিজে মিষ্টি খাওয়া ছেড়েছিলেনমেজর জিয়া থেকে রাষ্ট্রপতি জিয়া। এই সময়ে তিনি নিজে একটি পরাধীন দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে সশস্ত্র যুদ্ধের নেতৃত্ব দিলেন। তার ডাকে সাড়া দিয়ে দেশের আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়ে দেশ স্বাধীন করে।
আর ‘বড় নেতা’র পরামর্শমত তার দলের নেতারা ঐ সময়ে পালিয়ে জীবন রক্ষা করে। ইনার কথামত দেশের মানুষ চললে আজও এদেশ থাকত- পাকিস্তান। দেশ স্বাধীন হবার পরেও সেই নেতা এলেন নতুন বানানো পাকিস্তানী পাসপোর্ট নিয়ে; হয়ে গেলেন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট, তারপর প্রধানমন্ত্রী!! নিজের ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে পচাত্তরে করলেন সাংবিধানিক ক্যু–’বাকশাল’। আর এ শাসনতান্ত্রিক ক্যু’য়ের অবশ্যম্ভাবী প্রতিক্রিয়ায় আসে আগষ্ট-নভেম্বরের বিপ্লব। দেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীন হলো ।
সদ্য স্বাধীন দেশের চরম দুঃসময়ে আবার ডাক পড়ে- জিয়ার। এবারে দেশ গঠনের। তিন বছর আগে সেই ’বড় নেতা’ এ কাজে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছিলেন। কিন্তু দেশ গড়তে সকল দল ও মতের জ্ঞানী গুনীদের নিয়ে জিয়া এগিয়ে গেলেন। দুর্ভিক্ষপীড়িত ‘তলাবিহিন ঝুড়ি’র দেশকে তিনি ’সবুজ বিপ্লব’ দিয়ে দ্বিগুণ ফসল ফলিয়ে কি করে খাদ্যে স্বয়ম্ভর করলেন, সে গল্পটি প্রবীণদের স্মৃতিতে এখনও ভাস্মর। তবে এর একটি দলিল রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট অফিস হোয়াইট হাউজে। সেখানে লেখা রয়েছে “President Ziaur and I (President Carter) have been discussing, in the last few minutes, the possibility–he says the inevitability- that Bangladesh will in the near future be self-sufficient in food production–perhaps even able to export food to other countries”(The Carter Center). বাকী সব বাদ দিলেও কেবল এই একটি কাজের জন্য জিয়া “নোবেল শান্তি পদক” পাওনা হয়ে আছেন।
জিয়া কেবল দেশের খাদ্য ও শিল্প উৎপাদন বাড়িয়ে দুর্ভিক্ষ দূর করেননি, কৃষির সম্প্রসারণের জন্য নিজে হাতে স্বেচ্ছাশ্রমে খাল খনন করলেন। আইন শৃংখলার উন্নতি ঘটিয়ে দেশকে নিয়ন্ত্রনে আনলেন। সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে একে শক্তিশালী বাহিনীতে পরিনত করলেন। একদলীয় শাসন রদ করে বহুদলীয় গণতন্ত্র্র প্রবর্তন করলেন। ‘ইয়থ কমপ্লেক্সে’ মাধ্যমে যুবকদের জন্য ট্রেনিং ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলেন। বাংলাদেশীদের জন্য মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমবাজার উন্মুক্ত হলো। পরিবার পরিকল্পনা চালু করে দেশে জনসংখ্যা বিস্ফোরণ নিয়ন্ত্রণ করলেন। গণশিক্ষা প্রবর্তন করে সারাদেশে সাক্ষরতা বাড়ালেন। জাতিধর্ম নির্বেশেষে দেশের সকল মানুষের একক পরিচয় “বাংলাদেশী” নির্ধারণ করলেন। ফারাক্কা বাঁধের সমস্যাকে জাতিসংঘে তুলে ভারতকে বাধ্য করলেন বাংলাদেশের জন্য পানির গ্যারান্টি দিতে। দেশের সার্বিক উন্নয়নে জিয়া ঘোষণা করলেন ১৯ দফা কর্মসূচি এবং দারুনভাবে সফল হলেন। দেখা যায়, বাংলাদেশের হেন কোনো সেক্টর নেই, যেখানে জিয়ার হাত পড়েনি।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জিয়া বাংলাদেশকে অতি উচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। তার আমলেই বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, সৌদি আরবসহ প্রভাবশালী বিশ্বের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল। নবীন দেশ বাংলাদেশ স্থান করে নেয় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটানোর পাশাপাশি বিশ্বনায়ক জিয়া সারা দুনিয়ায় ছুটে বেড়ান আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে। আজ আমেরিকা; তো কাল জার্মানী; পরশু প্যালেষ্টাইন; তার পরের দিন চীন। কি ইরাক-ইরান যুদ্ধ বন্ধে তৎপরতা; কি জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন; কি ওআইসি; কি ‘আল-কুদস কমিটি’; কোথায় নেই জিয়া? আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার হোয়াইট হাউজে সম্বর্ধনা দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট জিয়াকে। হোয়াইট হাউজের কাছে জিয়া নেমেছিলেন হেলিকপ্টারে করে। এটা সম্ভব হয়েছিলো- জিয়ার স্টেটসম্যানশীপ ব্যক্তিত্ব ও কর্মের জন্যই। বাংলাদেশের অন্য কোনো প্রেসিডেন্ট বা সরকার প্রধানের ভাগ্যে এ সম্মান জুটে নি। ১৯৮০ সালে মর্কিন প্রেসিডেন্ট কার্টার হোয়াইট হাউজ লনে শতাধিক বিদেশী সাংবাদিকের সামনে জিয়ার প্রশংসা করে বলেছিলেন, “শুধু মুসলিম দেশ ও সমাজের মধ্যেই নয়, প্রকৃতপক্ষে গোটা বিশ্বসমাজে তিনি ব্যক্তিগতভাবে যে নেতৃত্ব দিয়েছেন আমরা তার জন্যেও কৃতজ্ঞ। নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হিসাবে বাংলাদেশ সাম্প্রতিক দুর্যোগের মাসগুলোতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে” (রুহুল আমিন সম্পাদিত জিয়াউর রহমান স্মারক গ্রন্থ, পৃষ্ঠা ৯৯৩)।
আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে একটি সংগঠন তৈরীর জন্য জিয়া চিঠি দিলেন দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোতে। পাঠালেন দূত। যার ফলশ্রুতিতে পরবর্তীতে জন্ম হলো–দক্ষিন এশীয় আঞ্চলিক সহযোতিা- SAARC. এক ভিশনারী রাষ্ট্রনায়ক ও বিশ্বনেতা জিয়াউর রহমানের কর্মের মূল্যায়ন এ দেশের কিছু অন্ধ দলবাজ করতে না পারলেও তাকে চিনেছিলেন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার, রোনাল্ড রেগ্যান, কূট ওয়াল্ড হেইম, হাবিব সাত্তি, মার্গারেট থেচার, ফিদেল ক্যাস্ট্রো, মার্শাল টিটো, ইয়াসির আরাফাত, শেখ জাবের আল সাবাহ, আহমেদ সেকুতুরে, সুহার্তো, সাদ্দাম হুসেন, শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান, মোরারজী দেশাই, ইন্দিরা গান্ধী, রিচার্ড জয়বর্ধনে, রাজা জিগমে সিংমে ওয়াংচুক, মামুন আবদুল গাইউম, রাজা বীরেন্দ্র, জিয়াউল হক, বাদশাহ হুসেনের মত বিশ্ব নেতৃবৃন্দ। ১৯৮১ সালে তাঁর অকাল শাদাদৎ না হলে আজ জিয়া হতেন মুসলিম বিশ্বের অবিংসবাদিত নেতা।
==========================================
হোয়াইট হাউজ ডকুমেন্ট:
Meeting With President Ziaur Rahman of Bangladesh
August 27, 1980
Remarks Following the Meeting:
PRESIDENT CARTER: It’s a great pleasure for me this afternoon to welcome to the White House and to our Nation, President Ziaur, the very fine leader of Bangladesh. Since their war of independence in 1971, tremendous progress has been made under his leadership. And with the courage and determination of the people of his great country, with a population of about 90 million, and with tremendous opportunities for economic improvement, President Ziaur has been in the forefront of making the lives of the Bangladesh citizens better each year.
The world suffered along with Bangladesh in recent years because of extreme hunger and deprivation among the citizens there, but President Ziaur and I have been discussing, in the last few minutes, the possibility—he says the inevitability-that Bangladesh will in the near future be self-sufficient in food production—perhaps even able to export food to other countries.
We also had a chance to discuss the advantages of democratization of the Bangladesh political system. The open and free election process which resulted in the election of President Ziaur has been an inspiration to the world. Also we have been very grateful at the leadership that President Ziaur has played personally, not only among the Moslem nations and the community there but indeed throughout the entire world community.
As a member of the United Nations Security Council, Bangladesh played a very important and statesmanlike role during the difficult months just past. We are deeply grateful that President Ziaur has come here. We observe with great interest his statement to the United Nations General Assembly, where he called upon the OPEC nations to provide oil to the poor and developing countries of the world at lower prices and also encouraged the OPEC nations with their tremendous influx of capital to invest in the developing nations, like Bangladesh, to provide a better life and employment for the people there.
President Ziaur, we’re delighted to have you with us. It’s an honor for our country to have you here, and we share with you the basic principles in a completely compatible way as we face the future together. And I’m very honored that you would come here to pay me this visit.
[ছবি কৃতজ্ঞতা: রুহুল আমিন রচিত “জিয়াউর রহমান স্মারক গ্রন্থ, পৃষ্ঠা ৯৯৩]
হোয়াইট হাউজে প্রেসিডেন্ট জিয়াকে অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার, ১৯৮০ সাল।